বই রিভিউ : আরব ভূখণ্ডে ইহুদি ও খ্রিস্টান জাতির ইতিহাস
লেখক : মাওলানা মুজিবুল্লাহ নদভি রহ.
অনুবাদ : মঈনুদ্দীন তাওহীদ
প্রকাশনায় : Ettihad Publication
নামের ওপর আকর্ষিত হয়েই মূলত বইটা কিনেছিলাম। আরবে ইহুদি আর খ্রিস্টান জাতির আগমন ঠিক কীভাবে হয়েছিল জানার সুযোগ হয়েছে। এর সাথে তাদের বিভিন্ন গোত্রের বিষয়ে অল্পবিস্তর তথ্য পেয়েছি। বইয়ের শুরুতে আরবের বিভিন্ন এলাকায় ইহুদির সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ফিরিস্তি বর্ণিত হয়েছে। ইহুদিরা আরবদের ওপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছিল মূলত সাংস্কৃতিক দিক থেকে। তাদের ছিলো বিশুদ্ধ ভাষাগত দক্ষতা। এছাড়া তাদের ব্যবসায়িক দক্ষতারও সুনাম ছিলো বেশ। এজন্য আরবরা নিজেদেরকে তাদের চেয়ে নীচু ভাবতো।
আবার আরবরা ছিলো পশুপালনে তাদের চেয়ে দক্ষ। মক্কা, মদিনায় অবস্থানরত ইহুদিরা তাদের দেখে অল্পবিস্তর পশুপালনে মনোনিবেশ করে। আরবে বহুদিন বসবাসের ফলে ইহুদিদের হিব্রু ভাষার বিভিন্ন শব্দ আরবদের সাংস্কৃতিতে মিশে গেছে। ঐসময়ের কবিতাগুলোতে যার সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
ইহুদিরা মূলত আরবে সুদের প্রচলন ঘটায়। এছাড়া তাদের বিভিন্ন বাজে অভ্যাস ছিলো। যা আরবের সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে আছে কোনো সম্পদ ধার দিয়ে তা সময়মতো ফেরত না ফেলে অন্যায় প্রস্তাব দেওয়া। সবচেয়ে খারাপ দিক ছিলো, ইহুদিদের সাথে আরবরা যতই বিনয় আচরণ দেখিয়েছে, তারা সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে নেয়নি। উপরন্তু বিভিন্ন সময়ে সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে যুদ্ধে জড়িয়েছে। শেষমেশ আরব থেকে সমূলে বিতাড়িত হয়েছে এই পাপিষ্ঠ জাতি।
বইয়ের একদম শেষঅংশে খুব সামান্য খ্রিস্টান জাতির আরবে আগমন কীভাবে হয়েছিল তা তুলে ধরা হয়েছে। খ্রিস্টানরা ইহুদিদের মতো দুষ্ট প্রকৃতির ছিলো না। তাদের অনেকে আবার ছিলো বেশ বন্ধুসুলভ। সত্য ঈসা আ. অনুসারীরা আরবদেশে শেষ নবীর আগমণের বিষয়টিও স্পষ্ট করে। আরবে কতগুলো খ্রিস্টান গোত্র বসবাস করতো, কেমন ছিলো তাদের বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক প্রভাব সেটা খুব কম জানতে পারলেও মোটাদাগে যথেষ্ট মনে হয়েছে। খুব বেশি জানার প্রয়োজনে ইতিহাসের বড় বড় সেট কিতাব পড়লেও হবে। আপাতত এই বইটাই জানার পক্ষে যথেষ্ট মনে করছি।
আমার কাছে বইটার সবচেয়ে ভালো লাগার দিক ছিলো সাবলীল অনুবাদ। পাঠক পড়েই আরাম পাবে। এছাড়া প্রয়োজনে টীকার ব্যবহার বইটার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়েছে। সর্বোপরি পাঠকমাত্রই বইটা থেকে উপকার পাবে। ইত্তিহাদ পরিবারের জন্য অশেষ দুআ, সালাম ও মোবারকবাদ থাকলো। আগামীর পথচলা মসৃণ ও সুখকর হোক, আমিন।